শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৫ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল, দুই ভাগে বিভক্ত

amarsurma.com

আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:

বদলে গেল ৬৯ বছরের ইতিহাস। জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের নরেন্দ্র মোদির সরকার। ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ করায় ‘বিশেষ মর্যাদা’ হারিয়ে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেল। জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হবে। উপত্যকায় থাকবে না আলাদা সংবিধান ও পতাকা।

‘ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত’

পটভূমিটা অবশ্য তৈরি হচ্ছিল গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে। অমরনাথের তীর্থযাত্রী এবং পর্যটকদের কাশ্মীর ছাড়ার নির্দেশ, অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের জেরে নানা জল্পনা চলছিল উপত্যকা জুড়ে। গতকাল সব জল্পনার অবসান ঘটে। সকালে প্রধানমন্ত্রী মোদির বাসভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। বেলা ১১টায় রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের স্বাক্ষর করা নির্দেশনামা পড়ে শোনান। তিনি জানান, রাষ্ট্রপতির আদেশবলে জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারার বিলোপ ঘটানো হলো। প্রত্যাহার করা হলো ওই ধারার অধীনের ৩৫ ধারাও। ৩৭০ ধারারই একটি অংশ হাতিয়ার করে পার্লামেন্ট এড়িয়ে এমন সংস্থান করল শাসক দল, যাতে পদ্ধতিগত ত্রুটি নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকল না বিরোধীদের। কারণ, ১৯৫০ সালে সংবিধান প্রণয়নের সময় ৩৭০ ধারায় জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হলেও সেই মর্যাদা স্থায়ী ছিল না, বরং ছিল অস্থায়ী সংস্থান (‘টেম্পোরারি প্রভিশন’)। কিন্তু এই ধারারই ৩ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি ইচ্ছা করলে এই ‘বিশেষ মর্যাদা’ তুলে নিতে পারেন। রাষ্ট্রপতির ওই ক্ষমতাকে ব্যবহার করেই কাজ হাসিল করল নরেন্দ্র মোদির সরকার। যদিও পার্লামেন্টে বিরোধীরা তুমুল হট্টগোল করেন। উল্লেখযোগ্যভাবে সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ওয়াকআউট করে বিজেপির শরিক দল জেডিইউ। আবার বিরোধী মায়াবতীর বিএসপি এবং অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দলের এমপিরা সিদ্ধান্ত সমর্থন করেন। সমর্থন আর বিরোধিতার মধ্যেই সন্ধ্যায় রাজ্যসভায় পাশ হয় জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন সংক্রান্ত বিল-২০১৯। পক্ষে ১২৫ এবং বিপক্ষে ৬১ ভোট পড়ে।

সাবেক অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি টুইটার বার্তায় জানিয়েছেন, একটা ঐতিহাসিক ভুলের সংশোধন হলো। তিনি আরো জানান, অস্থায়ী ও ক্ষণস্থায়ী বিধানকে কখনো স্থায়ী বলে ধরা যায় না। এটা হতেই হতো। উল্টো দিকে বিরোধী শিবিরের ওমর আবদুল্লাহ, মেহবুবা মুফতি থেকে গুলাম নবি আজাদ এবং পি চিদাম্বরম থেকে ডেরেক ও ব্রায়েনরা বলেছেন, গণতন্ত্রকে হত্যা করলো সরকার এবং এই সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক। রাজ্যসভায় অমিত শাহ বলেন, জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসের প্রবেশদ্বার ছিল ৩৭০ ধারা। এবার এটার অবলুপ্তির সময় হয়েছে…আজ যদি এটার অবলুপ্তি না হয়, তাহলে জম্মু-কাশ্মীর থেকে আমরা সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করতে পারব না। উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার সময় মুসলিমরা পাকিস্তানের পক্ষে যেতে চাইলেও তত্কালীন শাসক মহারাজা হরি সিং স্বাধীন কাশ্মীর চেয়েছিলেন এবং পাকিস্তানের আক্রমণ থেকে রক্ষায় ভারতের সঙ্গে যুক্ত হতে চেয়েছিলেন। বহুদিন ধরেই বিজেপি এবং সংঘ পরিবারের অবস্থান ছিল-অখ্ল ভারতে থেকে কাশ্মীরবাসী বিশেষ সুবিধা ভোগ করতে পারে না। এ বছর লোকসভা ভোটে বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহারেও ছিল ৩৭০ ধারা তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। সেটা বাস্তবায়িত হওয়ায় উচ্ছ্বসিত শাসক দলের নেতা-কর্মীরা।

যেসব পরিবর্তন হবে

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, জম্মু ও কাশ্মীর দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত হবে। একটি লাদাখ ও অন্যটি কাশ্মীর। এর মধ্যে কাশ্মীরে আইনসভা থাকলেও লাদাখে থাকবে না। গত সাত দশক ধরে ৩৭০ অনুচ্ছেদের সুবাদে এই রাজ্যটি ভারতের অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে বেশি স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত। ভারতের সংবিধান বিশেষজ্ঞ কুমার মিহির জানিয়েছেন, কাশ্মীরের পুনর্গঠনের প্রস্তাবগুলো এখন পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেছেন, এর আগে সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদের সুবাদে জম্মু-কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দারাই জমির মালিক হতে পারতেন। এখন যে কেউ ঐ রাজ্যের জমি কিনতে পারবেন। কাশ্মীরে চাকরির জন্য এখন অন্য রাজ্যের বাসিন্দারাও আবেদন করতে পারবেন। এতদিন কাশ্মীরের নিজস্ব সংবিধান ও একটি আলাদা পতাকার স্বাধীনতা দেওয়া ছিল। ভারতের পার্লামেন্টের উভয় কক্ষ ভবিষ্যতে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। পররাষ্ট্র, অর্থ ও প্রতিরক্ষার বিষয়টি আগের মতোই কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকবে।

কুমার মিহির জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব এতদিন ছিল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। কিন্তু নতুন ব্যবস্থায় রাজ্যটিতে কেন্দ্রের সরাসরি শাসনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে রাজ্যটি পরিচালনা করবেন একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নর। কাশ্মীরের রাজ্য বিধানসভা গত কয়েক দশক ধরে কেন্দ্রের যেসব আইনের অনুমোদন করেছেন, সেগুলো এখন সরাসরি কার্যকর হবে। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তগুলো এখন এই রাজ্যের জন্য সরাসরিভাবে প্রযোজ্য হবে। সংবিধান বিশেষজ্ঞ কুমার মিহির আরো জানান, ভারতের দ্লবিধি কিংবা স্থানীয় পিনাল কোড-এর ভবিষ্যত্ নিয়েও কেন্দ্রীয় সরকার কিংবা পার্লামেন্টকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রথা থাকবে কি না, সেটার প্রশ্নেও সিদ্ধান্ত নেবে ঐ দুটি প্রতিষ্ঠান। কাশ্মীরিদের দ্বৈত নয়, একক নাগরিকত্ব থাকবে, অর্থনৈতিক ও সাধারণ জরুরি অবস্থা কার্যকর যাবে, সংখ্যালঘুরা সংরক্ষণের আওতায় আসবেন এবং তথ্য অধিকার আইন কার্যকর হবে।

সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী গ্রেফতার

কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তথা পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আবদুল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কাশ্মীরস পিপলস কনফারেন্সের দুই নেতা সাজ্জাদ লোন এবং ইমরান আনসারিকেও বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রবিবার মধ্যরাত থেকে গৃহবন্দি ছিলেন তারা। শ্রীনগরের বাড়ি থেকে মেহবুবাকে সরিয়ে নিকটবর্তী সরকারি গেস্ট হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সরকারি সিদ্ধান্তকে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানাবেন বলে গতকাল বিবৃতি দেন ওমর আবদুল্লাহ। তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা গতকাল রাত পর্যন্ত জানা যায়নি। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার বা উপত্যকার প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি।

আঞ্চলিক শান্তি বিনষ্ট হবে: ইমরান খান

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ভারতের অবৈধ সিদ্ধান্তে আঞ্চলিক শান্তি, সম্প্রীতি ও নিরাপত্তা নষ্ট হবে। পাকিস্তানি মিডিয়া জিও টিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গতকাল মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে বৈঠকের একপর্যায়ে ইমরান খান এই সিদ্ধান্তে জাতিসংঘের নীতিমালা লঙ্ঘিত হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, এতে পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যকার সম্পর্কের আরো অবনতি হবে।

কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা

রাজধানী শ্রীনগর আর জম্মু অঞ্চলে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। একইসঙ্গে সব স্কুল-কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মোবাইল, টেলিফোন আর ইন্টারনেট সেবা আংশিকভাবে বন্ধ রয়েছে। নতুন করে আট হাজার সেনা পাঠানো হয়েছে কাশ্মীরে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com